সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

আজ শ্রাবণ মা’সে’র প্র’থ’ম সোমবার, জানুন জটেশ্বর শিবমন্দির নি’র্মা’ণের রো’মা’ঞ্চ’ক’র কা’হি’নী

আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা ব্লকের প্রান্তিক গ্রাম হলো জটেশ্বর।সব দিক থেকেই অন্যান্য গ্রামের থেকে অনেক উন্নত ও সময়ের সাথে হাত মিলিয়ে আরো উন্নতির পথে পা বাড়াবে এটাই স্বাভাবিক।এই জটেশ্বর বাজার এলাকায় সুপ্রসিদ্ধ একটি শিবমন্দির আছে যা এই এলাকার প্রত্যেকটি লোকের কাছে আস্থার প্রতীক।স্থানীয় লোকজনের কাছে জটেশ্বর শিব মন্দির নামে পরিচিতি।এই শিব মন্দিরের ইতিহাস বহু পুরোনো। জটেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পারা গেলো, এই শিব মন্দিরের বয়স আনুমানিক ১৯০বছর,এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে মন্দিরের কাঠামোর আমুল পরিবর্তন হয়েছে,বর্তমানে মন্দিরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে, বর্তমান সময়ে শিব মন্দিরের পাশাপাশি রাধাকৃষ্ণ ও জগন্নাথ দেবের মন্দির স্থাপন করা হয়েছে। এলাকার বয়স্কদের কাছ থেকে জানা গেলো, আনুমানিক বাংলার ১২৩৩সনে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল,এর পিছনে একটি রোমাঞ্চকর কাহিনী বিদ্যমান।

এই কাহিনীর শুরুতেই বলতে হয়,জটেশ্বরের দক্ষিণে অবস্থিত কাঠালবাড়ি গ্রাম,বর্তমানেও গ্রামটির নাম কাঠালবাড়ি নামেই পরিচিত, এবং জটেশ্বরের পূর্বদিকের গ্রামটির নাম হেদায়েতনগর,এই হেদায়েতনগর গ্রামের জোতদার ছিলেন বেদেং ধ্বনি।তিনি ছিলেন তত্‍কালীন সময়ের ক্ষমতাশালী জোতদার। তাঁর নীচে কর্মরত লোকেরা বাস করতেন কাঠালবাড়ি গ্রামে,এই গ্রামেই ১২৩৩ সনের কোনো এক শনিবার দুপুরে দিকে গ্রামবাসীরা লক্ষ্য করেন জঙ্গলের ভিতর একটি দুগ্ধবতী গাভীর বাঁট থেকে অনবরত দুধ পড়ে যাচ্ছে,কৌতুহলী গ্রামবাসী খানিকটা এগিয়ে গিয়ে যা দেখলেন তাতে তারা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না,তাঁরা সামনে গিয়ে দেখতে পান মাটি ভেদ করে একটি পাথর উঠে আছে,এবং সেই পাথরেই গাভীর দুধ অনবরত পড়ে চলেছে,এই দৃশ্য দেখে গ্রামবাসীর মনে ভীতির সঞ্চার হয়,তখনকার মানুষেরা ছিলেন ধর্মভীরু প্রকৃতির।

তাঁরা সবাই মিলে ভাবলেন যে,এখানে ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছে,এই কথাটি নিমিষে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো,লোক মারফত বেদেং ধ্বনির কানে এসে পৌছালো।তিনি হতভম্ব হয়ে যান এই খবর শুনে,তিনি তত্‍ক্ষণাত্‍ খবর পাঠালেন তাঁর বিশ্বস্থ হরেন রায় ও শচীন রায়ের কাছে,তাদেরকে আদেশ দিলেন ঠাকুরটিকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য, জোরদারের নির্দেশ মতো তাঁরা ঠাকুর আনতে বেড়িয়ে পড়লেন,তাঁরা ঠাকুর অর্থাত্‍ পাথরটিকে মাটি থেকে উঠিয়ে খাঁচায় ভরে বাকে করে অর্থাত্‍ একটি বাঁশ দুজনের কাঁধে নিয়ে মাঝখানে ঠাকুরটিকে রেখে জোরদারের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, সেই সময়ে পাথরটির উচ্চতা ছিলো মাত্র,১০-১২ইঞ্চি,ও ১৪-১৫ইঞ্চি গোলাকৃতি।

কাঁঠালবাড়ি থেকে জটেশ্বর হাট পর্যন্ত আনতে অনেক সময় লেগে গেলো, তাই খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেবার উদ্দেশ্যে ও চা পান করার জন্য বর্তমান যেখানে শিবলিঙ্গটি আছে সেখানে বাকটি নামিয়ে রেখে গেলেন, বিশ্রাম শেষে খাঁচাটি তুলতে গেলে কোনোভাবেই সেটিকে তুলতে না পেরে ধর্মভীরু লোকেদের মনে ভয় হয়, তাঁরা তত্‍ক্ষণাত্‍ জোতদারকে খবর পাঠান, তিনি এসেও ব্যর্থ হন, সেসময় জটেশ্বর কাঁচারিতে ম্যানেজার হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন ওলিয়ার রহমান, তাকে ডেকে পাঠানো হয়, তত্‍কালীন সময়ে কাঁচারিতে দুটি হাতি থাকতো, একটির নাম ছিলো প্যায়ারী ও দ্বিতীয়টির নাম ফুলমতী, এই হাতি দুটিকে এনেও খাঁচাটিকে তুলার ব্যাবস্থা করা হলেও সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে পড়লো, বাধ্য হয়ে খাঁচাটিকে এখানেই রেখে দিয়ে সবাই যে যার মতো বাড়ি চলে গেলো, পরের দিন সকালে জোতদার বেদেং ধ্বনি নিজে এসে কাশিয়া ও পাটকাঠি দিয়ে একচালার মতো একটি ঘর বানিয়ে দেয়,ও দই চিড়া, ধূপকাটি, ধুপধুনা দিয়ে নিজে প্রথম পুজো দেন, দীর্ঘদিন এভাবেই চলতে থাকে।

একদিন তিনিও পুজো দেওয়া বন্ধ করে দিলেন, মাঝে মধ্যে অনেক গ্রামবাসী এসে পুজো দিয়ে যেতো, কিন্তু নিয়মিত পুজো দেওয়া হতো না, বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর হঠাত্‍ করে এক উলঙ্গ সাধুর আবির্ভাব ঘটলো, তাকে সবাই ‘ কাথেয়া বাবা’ বলে ডাকতো, উনি দীর্ঘদিন পুজো দিয়েছিলেন ও নিয়মিত নিয়ম নিষ্ঠা ভোরে পুজো করতেন,একদিন তিনিও কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গেলেন কেউ কিছুই জানতে পারেনি, আবার ঠাকুর অবহেলায় পড়ে থাকতো, যার যখন ইচ্ছা হতো পুজো দিতো, এভাবে চলতে চলতে একদিন মিথিলা থেকে এক পুরোহিত এলেন, তিনি এসে স্থানীয়দের জানালেন তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন এখানে আসার জন্য, তিনি এসে দেখেন স্বপ্নে যা যা দেখেছেন সব একশো শতাংশ সত্যি, তিনি লোকেদের সাথে কথা বলে নিয়মিত পুজোর ব্যাবস্থা করেন যা আজও নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে হয়ে চলেছে, এই দীর্ঘ সময়ে শিবলিঙ্গটির আকার ও উচ্চতা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে, বর্তমানে শিব চতুর্থীর সময় মন্দির প্রাঙ্গনে উপচে পড়ে ভিড়,বহু পূর্নার্থীর সমাবেশ ঘটে।