সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

হার্টের অ’সু’খ সারিয়ে তুলতে জা’নে এই মাছটি

জেব্রা ফিশের নাম শুনেছেন কি? হ্যাঁ অনেকেই অবশ্য অবগত, আবার অনেকেরই এই জেব্রা ফিশ সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই। মূলত গ্রাম বাংলা আর উত্তর-পূর্ব ভারতের নদী, পুকুর, খালবিলে, ধানখেতের আলে এই জেব্রা ফিশটি পাওয়া যায়। এই মাছটির শক্তি সম্পর্কে জানলে আপনি রীতিমতো অবাক হবেন। মাছটি হয় হাতের আঙুলের আকারের ও গায়ে থাকে ডোরাকাটা দাগ। এই মাছটি ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পরেও মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, মেরুদণ্ডসহ তার শরীরের প্রায় সবকটি অঙ্গকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারে। যা মানুষ কিংবা অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণী করতে পারে না।

দুই ভারতীয় গবেষক অধ্যাপক চিন্ময় পাত্র ও দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়। ভারতের পুনের আগরকর রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বিভাগের বিজ্ঞানী চিন্ময় পাত্র। ফ্রাঙ্কফুর্টে গোথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর কার্ডিওভাসকুলার রিজেনারেশনের গবেষক দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়। এনাদের মতে, একটি বিশেষ জিন কীভাবে জেব্রা ফিশ এর ক্ষতবিক্ষত হৃদযন্ত্রকে (‘Myocardial Injury’) পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতে সাহায্য করে। জিনটির নাম- ‘ Connective Tissue Growth Factor (CTGF)’। জিনটির আরও একটি নাম রয়েছে, তাহল ‘Cellular Communication Network Factor 2-A’। ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত International Science Journal ‘Development’-এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

মূল গবেষক দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় অধ্যাপক চিন্ময় পাত্রের তত্ত্বাবধানে কাজ করেছেন। এছাড়া জার্মানির ‘ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট ফর হার্ট অ্যান্ড লাং রিসার্চ’ এবং আমেরিকার ডারহ্যামের ‘ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়’-এর মেডিক্যাল সেন্টারও সহযোগিতা করেছে। ১০ জনের গবেষকদল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বোঝা গেল কেন হার্ট অ্যাটাকের পর আমরা আর হৃদযন্ত্রকে আগের অবস্থায় ফিরে পাই না এবং কেনই বা তৃতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের ফলস্বরূপ মৃত্যুই অনিবার্য হয়ে ওঠে। আর এও দেখালেন যে কেনই বা জেব্রা ফিশের হৃদযন্ত্র বার বার ক্ষতবিক্ষত হয়েও পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে প্রায় নতুন হৃদযন্ত্রের মতোই?

গবেষণায় জেব্রা ফিশ বেছে নেওয়ার একমাত্র কারণ হল – সাধারণত একটি জেব্রা ফিশ বেঁচে থাকে ২ থেকে ৩ বছর। তাই ৩ মাস পরই এই মাছ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে। জেব্রা ফিশ নিয়ে কাজ করার একটা সুবিধা হলো, জন্মের পর ১০-১৫ দিন পর্যন্ত বাইরে থেকেই দেখা যায় কিভাবে তাদের হৃদযন্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয়সহ শরীরের সবকটি অঙ্গে বিকশিত হয়ে ওঠে এবং তাদের কাজকর্ম কিভাবে ঘটে। এছাড়া দেখা যায় কীভাবে হৃদযন্ত্রের ভাল্ব তৈরি হচ্ছে। আর একটা সুবিধা হলো জেব্রা ফিশের বেশির ভাগ কার্যকরী জিনের সাথে মানুষ ও ইঁদুরের কার্যকরী জিনগুলোর মিল রয়েছে।

গত শতাব্দীর ৬-এর দশক থেকেই গ্রাম বাংলার এই ‘ম্যাজিশিয়ান’ মাছটি নিয়ে বিদেশে শুরু হয় গবেষণা। এই গবেষণার কাজটা করা হয়েছে অন্তত ৬ মাস বয়সি জেব্রা ফিশ নিয়ে, যা ছিল সব প্রাপ্তবয়স্ক জেব্রা ফিশ। এখন বিশ্বের প্রায় ১ হাজারটি গবেষণাগারে জেব্রা ফিশ নিয়ে গবেষণা চলছে। হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা যেহেতু শিশুদের চেয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি, প্রবীণদের ক্ষেত্রে আরও বেশি, গবেষণার কাজটা করার জন্য বেছে নিয়েছেন প্রাপ্তবয়স্ক জেব্রা ফিশ।