সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

টাইম ট্রাভেল ট্রেন, যে ট্রেনের রহ’স্যে’র কোনো স’মা’ধা’ন বের হয়নি

টাইম ট্রাভেল, টাইম লুপ নিয়ে আজও নানা জল্পনা রয়ে গিয়েছে। ১৯১১ সালে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল ইতালিতে। সেই সময়ে ঘটনাটা খুব চর্চিত হলেও সেই ঘটনার মীমাংসা আজও হয়নি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের সময় ইতালিতে যে রেলওয়ে কোম্পানির খুব প্রসার ঘটেছিল তা অনেকেরই জানা কারণ সেই সময় রেলপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। লোকাল যাত্রীদের জন্য এক নতুন ধরণের ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়।প্রায় একশ জন যাত্রী ও ছয় জন ক্রু নিয়ে ১৪ই জুন দুপুরে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। গন্তব্য ছিল কাছের একটি রেলস্টেশন। কিন্তু যাত্রা শুরুর পূর্বে তারা নিজেদের ভয়ানক পরিণতির কথা কিছুই টের পায়নি। কারণ তারা এমন একটি যাত্রায় বের হয়েছিলেন যার কোন গন্তব্যস্থলও ছিল না, কোনো শেষও ছিল না। গন্তব্যে পৌছানোর জন্য পর্বতের ভিতরে ১ কিমি টানেলের মধ্য দিয়ে ট্রেনটিকে যেতে হতো।

ট্রেনটি টানেলের এক দিক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল ঠিকই, কিন্তু অন্য মুখ দিয়ে আর বের হল না। যান্ত্রিক কোনো ত্রুটির কারণে ট্রেনটি হয়তো ভেতরে থেমে গেছে, প্রথমে এমনটাই ভেবেছিলেন স্থানীয়রা। তাই কি করবেন ভেবে না পেয়ে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তারা টানেলের ভেতর প্রবেশ করেন। টানেলের ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে তাদের মনে জিজ্ঞাসা এবং ভয় বাড়তে থাকে। এগিয়ে যেতে যেতে তারা টানেলের অন্য মুখ দিয়ে বাইরে চলে আসে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ট্রেনটিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না। আর এই ঘটনা অবাক করে দেয় স্থানীয়দের। কিছু সময় পর রোমান রেলওয়ে অফিসের ২ জন মানুষ খুব আহত অবস্থায় সেখানে এসে হাজির হয়। তাদের বক্তব্য ছিল, টানেলে ঢোকার আগেই তারা অন্যরকম এক ভয়ের কারণে ট্রেন থেকে লাফ দেন। তবে লাফ দেওয়ার অাগে টানেলের মূখে সাদা ধোয়ার মত কিছু দেখেছিলেন তারা। এই দুই যাত্রীর বয়ান সেই ঘটনাকে আরও রহস্যজনক করে তুলেছিল। যাতে এই ধরণের ঘটনা আর না ঘটে তাই টানেলটির দুই মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই সময়। এরপর সেই ঘটনাটি ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায়।

হারিয়ে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে ১জন যাত্রীর আত্মীয় ১৯২৬ সালে পুরনো নথিপত্র ঘেটে এমন একটি ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন যা ছিল আরো আশ্চর্যের। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৮৪৫ সালে মেক্সিকোর এক পাগলাখানায় একইসঙ্গে একইদিনে ১০৪ জন রোগী ভর্তি হয়। তখন কিছু জানা না গেলেও কিছু দিন পর জানা যায় ১০৪ জন মানুষই ইতালিয়ান। তারা বলেছিলেন তারা রোম থেকে এসেছে। এই মানুষগুলোর বয়ান এবং ১৯১১ সালের ২জন লাফ দেওয়া যাত্রীর বয়ান একদম মিলে যায়। কিন্তু সকলেই অবাক হয়েছে এই ভেবে যে ১৯১১ সালে হারিয়ে যাওয়া যাত্রীরা ১৮৪৫ সালে একটি পাগলাগারদে কিভাবে ভর্তি হতে পারে? আরেকটি বিষয়, সব যাত্রী বলছিল তারা রোম থেকে এসেছে ট্রেনে করে। কিন্তু রোম থেকে মেক্সিকোর দূরত্ব প্রায় ১০ হাজার কিমি! এই দুটি স্থানের মধ্যে রয়েছে বিশাল আটলান্টিক মহাসাগর ও বেশ কয়েকটি সাগর! কিভাবে একটি ট্রেন সাগর মহাসাগর পাড়াপাড় করতে পারে?

যাত্রীদের কথা যাচাই করার জন্য রোম থেকে মেক্সিকোতে আসা জাহাজগুলোর প্যাসেঞ্জার লিস্ট চেক করা হলেও সেখানে মেলেনি কোনো তথ্য। তাহলে ঐ মানুষ গুলো কারা? এমনকি এই ইতালীয় মানুষগুলোর মধ্যে একজনের কাছে একটি টোবাকো বক্স পাওয়া যায়। যার ওপর কোম্পানির নামের সঙ্গে ১৯০৭ সাল লেখা ছিল। এই বক্সটি আজও মেক্সিকোতে রাখা আছে। ট্রেনটি ঐ টানেল থেকে কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিল সেই রহস্যের সমাধান আজও হয়নি। কিন্তু এই ট্রেনটি কয়েকবার রাশিয়া, রোমানিয়া সহ ইতালির আরও কয়েকটি স্থানে দেখা গিয়েছে। সমস্ত প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় জানা গেছে তারা যে ট্রেনটি দেখেছে তা হঠাৎ তাদের সামনে এসেছিল, আবার গায়েব হয়ে গিয়েছিল। ট্রেনটিতে ৩টি কমপার্টমেন্ট ছিল। যা একটি লম্বা লোহার দণ্ড দিয়ে একে অপরের সঙ্গে লাগানো ছিল। রোমের মিউজিয়ামে ট্রেনটির একটি মডেল রাখা আছে। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, আলাদা আলাদা জায়গায় দেখতে পাওয়া ট্রেনটি সেই ট্রেনই!