বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভের দাপটে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুও হচ্ছে। তবে প্রচুর মানুষ করোনা থেকে সুস্থও হচ্ছেন। অনেকেই আবার ঘরে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে জানেন কি, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও এর প্রভাব শরীরে থেকেই যায়। তাই সুস্থ হয়ে ওঠা মানে এই নয় যে, তারপর নিজের ইচ্ছে মতো চলা যাবে।
এ ছাড়াও করোনা নেগেটিভ আসলেও পরবর্তীতে কিন্তু আবারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। তাই সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, ৭টি টেস্ট অবশ্যই করানো জরুরি। সেইসঙ্গে নিয়মিত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। জেনে নেওয়া যাক কোন টেস্টগুলো করানো জরুরি।
igG অ্যান্টিবডি টেস্ট :
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরে, দেহ সহায়ক অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এর ফলে ভবিষ্যতে করোনা সংক্রমণ রোধ হয়। শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরেই নির্ভর করে না অ্যান্টিবডি লেভেল। পাশাপাশি এটি প্লাজমা দানের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপকারি। সাধারণত, শরীরে অ্যান্টিবডির বিকাশ হতে প্রায় এক বা দুই সপ্তাহ সময় লাগে। সুতরাং সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই শ্রেয়।প্লাজমা দান করতে চাইলে সুস্থ হওয়ার এক মাসের মধ্যে টেস্ট করানো উচিত এবং এটিই প্লাজমা দানের জন্য আদর্শ সময়।
CBC টেস্ট :
Complete Blood Count করা হয় CBC টেস্টের মাধ্যমে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লাড সেলস (RBCs, WBCs, Platelets etc) পরিমাপ করা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের পরে কোনো ব্যক্তি কতটা সুস্থ আছেন এবং কোন বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া বাধ্যতামূলক।
হার্ট ইমেজ এবং কার্ডিয়াক স্ক্রিনিং :
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর শরীর অনেকটাই দুর্বল হয়ে যায়। সংক্রমণের ফলে শরীরে প্রচুর প্রদাহ হয়, যার কারণে হার্টের পেশীগুলি দুর্বল হয়ে যায়। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর অনেক রোগীর হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাই, করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরে হার্ট ইমেজ বা কার্ডিয়াক স্ক্রিনিং অবশ্যই করাতে হবে।
চেস্ট স্ক্যান টেস্ট:
এই টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় যে, আপনার ফুসফুস কতটা রিকোভারি করছে । সিটি স্ক্যান-এর দ্বারা Lung Function রিকোভারি সম্বন্ধে জানতে পারা যায়।
ভিটামিন ডি টেস্ট:
ভিটামিন ডি একটি পুষ্টিকর উপাদান, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস হল সূর্যালোক । এজন্য করোনা সংক্রমণ এড়াতে, এমনকি কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হতেও ভিটামিড গ্রহণ করার বিকল্প নেই। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর এজন্য শরীরে ভিটামিন ডি’এর ঘাটতি আছে কি-না তা টেস্ট করানো প্রয়োজন।
নিউরো-ফাংশন টেস্ট:
করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরে, রোগীদের মধ্যে বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত সাইকোলজিক্যাল এবং নিউরোলজিক্যাল লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরে, ব্রেন এবং নিউরোলজিক্যাল ফাংশন টেস্ট অবশ্যই করাতে হবে যাতে ব্রেন ফগ, উদ্বেগ, অবসন্নতা এবং মাথা ঘোরা, ইত্যাদি লক্ষণগুলি সনাক্ত করা যায়।
গ্লুকোজ-কোলেস্টেরল টেস্ট:
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকেরই শরীরে ডায়াবেটিসের সন্ধান মিলেছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে তাদের শরীরে ডায়াবেটিসের কোনও লক্ষণই ছিল না। এজন্য কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর গ্লুকোজ টেস্ট করানো জরুরি। এতে জানতে পারা যাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা।