সেই আগেকার যুগ থেকে চলে আসছে এই প্রথা, সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব নিতে হয় পুরুষদের। যদিও আজ মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়িত্ব বর্তায় পুরুষদের ওপর। তাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসার শুরু করতে দেরী হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি পরিবার শুরু করার পরিকল্পনাও করতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে নারীরা যতটা চিন্তিত, পুরুষ যেন ততটাই উদাসীন। গবেষকদের ৪০ বছরের গবেষণার ফলস্বরূপ দেখা গেছে যে একটি দম্পতির সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা, মায়ের গর্ভাবস্থার জটিলতা এবং সন্তানের স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপর ওই দম্পতির বয়স অনেকটাই প্রভাব ফেলে। গবেষকরা আরও বলছেন যে দায়িত্বে র চাপে পড়ে যদি সংসার শুরু করতে দেরীও হয়ে যায় তাহলে তাদের ৩৫ বছর পার হওয়ার আগেই সন্তান নিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা অবশ্যই উচিত।
“গবেষকরা বলছেন, “নারীর মতো পুরুষেরও আছে জৈবিক ঘড়ি বা ‘বায়োলজিকাল ক্লক’ যা নিয়ত গতিশীল। তাই পুরুষ যদি সময়ের কাজ সময়ে না করে তবে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে তার স্ত্রী ও অনাগত সন্তানের উপর।” বাবার বয়স বেশি হলে তার নবাগত সন্তান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ের আগেই ভুমিষ্ট হয়, প্রসবের সময় মারাও যায়, অস্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ে জন্মায়, এমনকি জন্মগত বিকলাঙ্গও হতে পারে। এই শিশু বেঁচে থাকলে শিশুদের অল্প বয়সে ক্যান্সার, মানসিক অসুস্থতা, প্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে ওঠা ইত্যাদি বেশি দেখা যায়।
‘ম্যাচুরিটাস’ নামক জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, বয়স ৪৫ এর পর পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকার কারণে তার সঙ্গীর ‘জেস্টেশনার ডায়াবেটিস’, ‘প্রি-এক্লামসিয়া’, ‘প্রি-টার্ম বার্থ’ ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে। এগুলো সবই গর্ভবস্থাজনীত বিভিন্ন জটিলতা। গবেষণায় আরও দেখা যায়, স্ত্রীর বয়স যদি ২৫ বছরের কম হয় সেখানেও মধ্যবয়সী পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা নিয়ে বিপাকে পড়েন।
“বয়স ৩৫ পার হওয়ার পর নারীদের শরীরে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, ফলে গর্ভধারণ ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।হুমকির মুখে পড়ে, এই বিষয়টা সম্পর্কে প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু এই বিষয়টি যে শুধু নারী শরীরের ক্ষেত্রে ই প্রযোজ্য তা নয়। পুরুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ধরনের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। এ বিষয়ে অধিকাংশ পুরুষেরই কোনো ধারণা নেই।” এমনটাই বললেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার’স ইউনিভার্সিটির রবার্ট উড জনসন মেডিকেল স্কুল’য়ের উইমেন’স হেল্থ ইনস্টিটিউটের পরিচালক গ্লোরিয়া বাকমান।
বাকমান মনে করেন, এই দুর্ঘটনাগুলো মূলত হয়ে থাকে টেস্টোস্টেরন’এর সরবরাহের অভাবের জন্য। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জৈবিকভাবে টেস্টোস্টেরন- এর ক্ষরণ কমতে থাকে। সেই সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণু ও বীর্যের নিম্নমানও এর অন্যতম কারণ । বাকমান বলেন, “নারীরা বরাবরই তাদের প্রজনন ক্ষমতা নিয়ে পুরুষের তুলনায় অনেকটা সচেতন। পুরুষ বিপদে না পড়া পর্যন্ত যৌন কিংবা প্রজনন ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চিকিত্সকের কাছে যান না। তবে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা নারী-পুরুষ দুজনের জন্যেই জরুরি। আর চিকিত্সকদেরও উচিত ৩৫ পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনই সন্তান নেননি এমন পুরুষদের এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।”
উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, “মানুষ যত যৌবনকাল থেকে বৃদ্ধ বয়সের দিকে অগ্রসর হয় তত তার পেশি যেমন দুর্বল হতে থাকে, কমতে থাকে স্থিতিস্থাপকতা, ঠিক তেমনি পুরুষের শুক্রাণুও বয়সের সঙ্গে তার শক্তি হারায়।”