ববিতা সরকার প্রথম কুড়ির মধ্যে নাম দেখে চোখেমুখে প্রশান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু সেই শেষ, গত পাঁচ বছরে এক মুহূর্তও শান্তিতে তিষ্ঠোতে পারেননি তিনি। অন্য সময় হলে হয়ত, একধাপ পিছনো নিয়ে মাথা ঘামাতেন না তিনি।
কিন্তু যে স্কুলের চাকরি পেতে দিনরাত এক করে ফেলেছেন, হাজারো কাজ সামলে চালিয়ে গিয়েছেন, মন্ত্রবলে এক নিমেষে সব ওলটপালট হয়ে যাবে, তা মেনে নিতে পারেননি ববিতা। তাই সামনের জন কতটা প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী, তা না ভেবেই নিজের অধিকার আদায়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
তাঁর সেই একরোখা মনোভাবেই আজ এসএসসি দুর্নীতি মামলায় কাঠগড়ায় স্বয়ং রাজ্যের শিক্ষা প্রতি মন্ত্রী পরেশ অধিকারী। প্রভাব খাটিয়ে নিজের কম নম্বর পাওয়া মেয়েকে তিনি চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের একক বেঞ্চে চলছিল মামলাটি।
আরো পড়ুন: ঠি’কা’না কি ব’দ’ল করছেন সৌরভ? বেহালা ছে’ড়ে কোথায় বাড়ি কিনছেন?
বিচারপতি একদিকে যেমন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি খারিজ করার নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনই জানিয়েছেন, ওই ফাঁকা পদে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ববিতা সরকারকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তবে ববিতার প্রশ্ন, আদালত তো বলে দিল। কিন্তু কমিশন ব্যবস্থা নেবে কি?। গত চার বছর ধরে নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন ববিতা। ২০১৬ সালে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ২০১৭-র মেধাতালিকায় জায়গাও করে নিয়েছিলেন। তারও আগে ২০১০ সাল থেকে শিক্ষকতার জন্য প্রস্তুতি শুরু তাঁর।
সেই চেষ্টা ব্যর্থ হতে বসেছিল অবৈধ ভাবে পাওয়া মন্ত্রী-কন্যার চাকরিতে। শুক্রবারের রায়ের পর অঙ্কিতা প্রসঙ্গ উঠতেই ববিতার মন্তব্য, ও তো ইন্টারভিউ দেয়নি। ওর চাকরি হওয়ার কথাই ছিল না। আমি সমস্ত প্রক্রিয়া মেনে পরীক্ষা দিয়ে জায়গা করে নিয়েছিলাম। ওই চাকরি তো আমারই পাওয়া উচিত।
তাই বিচারপতি অভিজিতের রায়ে খুশি ববিতা। তবে অনিশ্চিত রায়ের কার্যকারিতা নিয়ে। বিচারপতির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, উনি আমার কাছে ভগবানের মতো। কিন্তু ওঁর নির্দেশ পেয়ে কমিশন কি ব্যবস্থা নেবে? আমি চার বছর ধরে অপেক্ষা করছি এই চাকরির জন্য। কমিশনকে তাই অনুরোধ করব, আমাকে ওই চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।