সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

ভাবতেন বি-টাউনের সব অভিনেতাই তাঁকে মা’র’তে চান! কেরিয়ারের মধ্যগগনে থেকেও হা’রি’য়ে যান পরভিন

বলিউডের সত্তর দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম বোল্ড একট্রেস ছিলেন পারভিন ববি। ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল গুজরাতের জুনাগড়ে জন্ম পরভিনের। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। পরভিনের যখন ৫ বছর বয়স, তখন বাবাকে হারান তিনি। আমদাবাদের মাউন্ট কারমেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুলের পাঠ শেষের পর সেখানে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হন পারভিন।

১৯৭২ সালে মডেল হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন পরভিন। মডেলিং করতে করতেই রুপোলি পর্দায় নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পান তিনি। ১৯৭৩ সালে ‘চরিত্র’ সিনেমার হাত ধরে বলিউডে হাতেখড়ি হয় পরভিনের। তবে জীবনের প্রথম ছবি ফ্লপ হয় তাঁর। তাতে অবশ্য খুব একটা ক্ষতি হয়নি পরভিনের। কারণ বক্স অফিসে ওই ছবি না চললেও পরভিনের উপস্থিতি নজর কাড়ে।

এভাবেই একের পর এক ছবি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পারভিন সকলকে। এরপর ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘দিওয়ার’। অমিতাভ বচ্চন, শশী কপূরের সঙ্গে এই ছবিতে অনিতা চরিত্রে দেখা গিয়েছিল পরভিনকে। এই ছবির হাত ধরেই বলিপাড়ার প্রথম সারির নায়িকা হিসাবে নিজের জায়গা করে নেন পরভিন।

তাঁর জীবন একদম টপ লিস্টে চলে গেলেও তার জীবনে নানা রকম ওঠা পড়া আসে। তাঁর ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছিল। গ্ল্যামার দুনিয়ায় নায়িকার কেউ প্রেমে পড়বেন না, তাও হয় নাকি, শোনা যায়, বলিপাড়ায় প্রথমে অভিনেতা-পরিচালক ড্যানি ডেনজংপার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পরভিন। তবে কখনই এই সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি ড্যানি।

আরো খবর: সুন্দরী ও বয়সে ছোট নারীদেরই বি’য়ে করা উ’চি’ত ছেলেদের, বড়ো ম’ন্ত’ব্য সইফ আলী খানের

এরপরে অভিনেতা কবীর বেদীর প্রেমে পড়েছিলেন পরভিন। তবে সেই প্রেমও টেকেনি। বলিপাড়ায় এর পর যাঁর সঙ্গে প্রেমের বাঁধনে নিজেকে বেঁধেছিলেন পরভিন, তিনি পরিচালক মহেশ ভট্ট। তাঁকে নিয়ে পারভিনের জীবনে একটা বড়ো সরো পরিবর্তন আসে। সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছিলেন তার আর মহেশ ভাটের সম্পর্ক নিয়ে।

বলিপাড়ায় তখন সুপারস্টার নায়িকা পরভিন। তাঁর প্রেমে পরে সেই সময় স্ত্রীকে ছেড়ে পরভিনের সঙ্গে একত্রবাস শুরু করেছিলেন মহেশ। তবে স্মুথলি চলেনি তাদের সম্পর্ক যত দিন গেছে তাঁদের সম্পর্কের সমীকরণ বিগড়ে গেছে। তাদের একসাথে থাকা কালীন একদিন ঘরে ঢুকে পরভিনকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন মহেশ। ঘরের কোণে ভয়ে কুঁকড়ে বসে রয়েছেন পরভিন। তাঁর হাতে ছুরি।

মহেশকে দেখে ইশারায় পরভিন বোঝান চুপ থাকতে। কারণ ঘরে নাকি অন্য কেউ রয়েছেন, যিনি পরভিনকে হত্যা করবেন। একবার নাকি পারভিন বলেছিলেন অমিতাভ বচ্চন নাকি তাঁকে মারতে চেয়েছেন। এই নিয়ে অনেক হুলুস স্থুলুস কাণ্ড হয়। আসলে স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন পরভিন। আর সেই থেকেই নানা রকম আতঙ্কে ভুগতে থাকেন তিনি।

এই সময় পরভিনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর দুই প্রাক্তন প্রেমিক ড্যানি এবং কবীর। পরভিনকে আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার জন্য মহেশকে সেই সময় পরামর্শ দিয়েছিলেন কবীর। এর পর পরভিনকে সুস্থ করতে মহেশ নানা চেষ্টা করেছিলেন। একাধিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান তিনি। তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি।

এই অসুস্থতার জন্য কেরিয়ারের মধ্যগগনে থেকেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকেন পরভিন। শোনা যায়, পরভিনকে সুস্থ করতে ‘ইলেক্ট্রিক শক থেরাপি’ প্রয়োগের কথা বলা হয়েছিল, তবে তাতে রাজি হননি মহেশ। যত দিন গেছে আরো বেশি সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন পরভিন, যে তাঁকে খাবার দেওয়া হলে, তা আগে জোর করে মহেশকে খাওয়াতেন। যাচাই করে দেখতেন, সেই খাবারে কিছু মেশানো রয়েছে কি না।

ভালবাসার জন্য মহেশও তাঁর কথা মেনে চলতেন। ওষুধও ঠিক মতো খেতে চাইতেন না পরভিন। এভাবেই দিন কাটছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। একটা সময় পর মহেশ ও পারভিনের বিচ্ছেদ ঘটে। তবু পারভিনের সাথে তার সম্পর্ক শেষ হয়েও হয়নি। টান তাঁর প্রতি মহেশের থেকেই যায়। এর পর পেরিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৩ বছর।

২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় পরভিনের দেহ। নায়িকার বাড়ির দরজায় ৩ দিন ধরে পড়েছিল খবরের কাগজ। আর এতেই সন্দেহ হয়। পরে পুলিশ এসে তাঁর দেহ উদ্ধার করে। এই নিয়ে নানা তদন্ত হয় এরপর পুলিশ জানতে পারে যে, দেহ উদ্ধারের ৩ দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

আরো খবর: আজ শনিবার, দেখে নিন শনি মহারাজের কৃপা কোন রাশির উপর থাকবে, রইলো রাশিফল (11.03.2023)

পরভিনের মৃত্যু অসুস্থতার কারণে এবং অস্বাভাবিকতা নেই বলে দাবি করে পুলিশ। পরভিনের শেষকৃত্যের জন্য তাঁর স্বজনরা এগিয়ে না এলে তিনি নিজেই তা করতেন বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন মহেশ। জুহুতে পরভিনকে সমাধিস্থ করেন তাঁর পরিজনরাই। পরভিনের মৃত্যুর পর তাঁর জীবন নিয়ে আরও একটি ছবি বানান মহেশ।

এই ছবিটি প্রযোজনাও করেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় সেই ছবি। যার নাম ‘ও লমহে’। পরভিনের সঙ্গে সম্পর্কে ভাঙনের পরও তাঁকে ভুলতে পারেননি মহেশ। তাঁদের সেই প্রেমকাহিনি এখনও ভুলতে পারেনি বি-টাউন। সেই সঙ্গে ভোলা যায়নি পরভিনকেও।