অনেকেই আছেন যারা নিজের জীবনের সর্বস্ব দিয়ে নিজের সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করাচ্ছেন। আমাদের মধ্যে এখন কেউই প্রায় বাংলা মিডিয়ামে নিজেদের সন্তানকে পড়াশোনা করাতে চাই না। কিন্তু যারা বাংলা মিডিয়াম নিয়ে দিনের-পর-দিন হীনমন্যতায় ভোগেন তাদের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ হলেই অঙ্কিতা নন্দী। মাত্র ৩০ বছর বয়সে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুলের ছাত্রী অঙ্কিতা নন্দী নিউটাউনে ১৫ হাজার বর্গফুটের অফিসে ৮০ জন কর্মী নিয়ে বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসা করছেন।
গুগোল মিঠাই ব্যবসা নিয়ে অঙ্কিতা বলেছেন, আমরা দেশের বাজারে কিছু বিক্রি করি না। আমাদের বাজার দেশের উন্নত দেশগুলিতে। আমাদের ব্যবসার লক্ষ্য উন্নত দুনিয়ার ব্যবসায়ী সংস্থা। ইতিমধ্যেই তার কাছে রয়েছে 25 টি সফটওয়্যার, যা ব্যবসায়ীক সংস্থাগুলিকে বিপণন থেকে বিক্রির কাজে সাহায্য করে।
কলেজ জীবন থেকে ব্যবসার নেশা অঙ্কিতার। তিনি বলেন, দাদাকে দেখতাম চাকরিসূত্রে সারাদিন কম্পিউটারে বসে থাকতে। রাতে বাড়িতে এসে কোনরকমে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। সকাল হতে না হতেই আবার দৌড় দিতেন কাজে। সাধারণ পরিবারে বড় হওয়া এবং তাদের পরিশ্রম দেখে প্রথম থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আর যাই করুন না কেন ব্যবসা করবেন। চাকরি কখনোই করবেন না তিনি।
ভারতীয় রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এর অঙ্কিতা কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে কলেজে তৃতীয় বর্ষে বানিয়ে ফেলেন হোয়াটসঅ্যাপ ভিত্তিক ব্যবসার যোগ্য একটি অ্যাপ। পশ্চিম এশিয়ায় বেশ ভালো দামে বিক্রি হয়েছে এটি। মাসে ৬০ হাজার করে আয় হতো তখন তাদের। কিন্তু বাকিদের মধ্যে আর উৎসাহ ছিল না অন্য কিছু করার। তাই পরবর্তীকালে একা এগোনোর জন্য সিদ্ধান্ত নেন অঙ্কিতা। ঠিক তখনই তার জীবনে আসেন আমেরিকার যুবক জন ভন।
টিন্ডার নামক ডেটিং অ্যাপ এর দ্বারা তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কলকাতায় এক রেস্তোরাঁয় দেখা করেন। প্রথম দর্শনেই সময় কেটে যায় ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করতে করতে। তারপরে বাকিটা ইতিহাস। দুজনেই কলকাতায় নেমে পড়ে নতুন ব্যবসাতে। সেক্টর ফাইভে 1200 বর্গফুটের একটি অফিস ভাড়া করেছিলেন তারা। সেখানে দুই জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন তারা।
প্রথমে বিভিন্ন সংস্থার কাজের অর্ডার ধরতে শুরু করেন নেট থেকে। নিজেদের সফটওয়্যার তৈরি করে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। সেখান থেকে আজ ১৫ হাজার বর্গফুটের অফিস তাদের। ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা কি জানাতে গিয়ে অর্পিতা বলেন,” এই মুহূর্তে আমাদের সফটওয়্যার ব্যবহারীর সংখ্যা ১০ হাজার। এখনই ভারতে ব্যবসা করার কোন পরিকল্পনা নেই।” “স্বপ্ন দেখলেই হয় না, তা আঁকড়ে ধরে থাকতে হয়। তবেই তা পূরণ হয়’, এমনটাই জানালেন অঙ্কিতা।