দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য জায়গা করে নিয়েছে। কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণেশ্বরের শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরটিকে বলেছিলেন ল্যাবরেটরি। উনিশ শতকের উজ্জ্বলতম সমস্ত মানুষ কোন না কোন সময় পৌঁছেছিলেন এই ঘরে। শ্রী রামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নামিদামি ব্যক্তিরা। তার থেকেও বড় কথা, রামকৃষ্ণ মঠ এবং মিশন যখন তৈরি হয়েছিল তার পরোক্ষ শুরু হয়েছিল এই ঘর দিয়ে।
ঠাকুরের ঘর ছাড়াও দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির বাঙালি তথা ভারতবর্ষের কাছে একটি উজ্জ্বলতম নাম। আমরা সকলেই জানি রানী রাসমণি দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৮৫৫ সালের ৩১ মে, রানী রাসমণি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই কালী মন্দির টি। ১৮৪৭ সালে রানী রাসমণি ঠিক করেছিলেন যে তিনি কাশি যাত্রা করবেন। সেইমতো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি।
তবে তার কাশী যাত্রা আর করা হয়নি। যাত্রা ঠিক আগের দিন মা কালী তার স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেছিলেন যে, কাশি যাবার আর প্রয়োজন নেই রানী রাসমনির। গঙ্গার তীরে যেন একটি মন্দির স্থাপন করে মা কালী সাধনা শুরু করে দেন তিনি। এই স্বপ্ন দেখার পর রানী রাসমণি শুরু করে দেন গঙ্গাতীরে জমি কেনার খোঁজ। বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে ১৮৪৭ সালে দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী মন্দির নির্মাণ করেন তিনি।
১৮৪৭ সাল থেকে ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত চলে মন্দির নির্মাণের কর্মসূচি। ১০০ ফুটের বেশি উঁচু নবরত্ন এই মন্দিরের স্থাপত্য আজও মানুষকে সমানভাবে বিস্মিত করতে পারে। সেই সময় এই মন্দির তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৯ লক্ষ টাকা, যা আজকের দিনে প্রায় কয়েক কোটি টাকার সমান।