সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

বায়ুদূষণ বা’ড়’ছে, নিউমোনিয়া-সহ শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের আ’শ’ঙ্কা দিনকে দিন বে’ড়ে’ই চ’লে’ছে

কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। আর তাতেই শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুখে ভুগছেন বহু মানুষ। প্রতি বছর দীপাবলির পর দিল্লি ও তার আশপাশের অঞ্চলে দূষণ যেন মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ে। বাজি পোড়ানো এবং আশপাশের রাজ্যে চাষের খেতের আগাছা পোড়ানোর কারণে যে ধোঁয়া তৈরি হয়, তখন তার সঙ্গে কুয়াশা মিশে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। আর এই ধোঁয়াশার কারণে প্রতি বছর দিল্লির রূপ ভয়াবহ হয়ে ওঠে। দৃশ্যমানতা কমতে থাকার কারণে সন্ধ্যেবেলার মতো অন্ধকার যেন সকালবেলাতেও নেমে আসে। তাই এই সময়ে শ্বাস – প্রশ্বাসের খুব অসুবিধা হয়। আর এই বছরের পরিস্থিতি আগের বছরগুলির পরিস্থিতিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। বায়ুর মান অত্যধিক খারাপ হওয়ার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি সরকারি দফতরের কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে যে বিষয়টা সব থেকে বেশি ভাববার বিষয় তা হল- অন্দরের বায়ুদূষণ। অর্থাৎ বাইরের সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভিতরেরও বাতাস দূষিত হয়ে উঠছে। ফলে এই দুই কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। এমনকী নিউমোনিয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।

সাধারণত বায়ুদূষণের জেরে মানুষ নানান ধরনের অসুখে আক্রান্ত হয়। তবে বায়ুর মান খারাপ হওয়ার কারণে হাঁপানি, নিউমোনিয়ার মতো রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার পিছনে শুধুমাত্র ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়াই দায়ী নয়। বাতাসে উপস্থিত দূষণকারী উপাদান বা পলিউট্যান্টের কারণেও মানবদেহের ফুসফুসে প্রদাহজনিত সমস্যা বাড়ছে। সময়মতো ঠিকঠাক চিকিৎসা না-করাতে পারলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই কী ভাবে বায়ুদূষণের সাথে মোকাবিলা করে নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে তা জেনে নেওয়া আবশ্যক।

নিউমোনিয়া হল এক ধরনের সংক্রমণ। যার জেরে ফুসফুসে উপস্থিত বায়ু থলি বা অ্যালভিওলাইগুলিতে প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং ফ্লুয়িড জমতে শুরু করে। ওই বায়ু থলিতে যখন মারাত্মক প্রদাহ হয়, তখন তার জেরে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত জটিলতা তৈরি হয় এবং রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেয়। তবে সাধারণত যাঁদের শ্বাসজনিত সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। বিশেষ করে এটা ছোট শিশু অথবা প্রবীণ মানে পঁয়ষট্টির উপর যাঁদের বয়স, তাঁদের এই রোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এ বার নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণ হয় সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের কারণে। শুধু তা-ই নয়, কোনও সারফেসের সংস্পর্শে এলেও সেখান থেকে ভাইরাস এবং প্যাথোজেনের জেরে এই সংক্রমণ হতে পারে। আসলে ভাইরাস এবং প্যাথোজেন বাতাসে ঘুরে বেড়ায় এবং তার জেরে বাতাস সংক্রমিত হতে শুরু করে।

বায়ুদূষণ এবং নিউমোনিয়ার পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। নিউমোনিয়া একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সংক্রমণ। ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে নিউমোনিয়ার আশঙ্কাও বাড়তে শুরু হয়। এসব ক্ষেত্রে অনেকেই হয়তো ভাবেন যে, সংক্রমণ এড়াতে ঘরে থাকা উচিত। কিন্তু জানেন কি! বাইরের সঙ্গে সঙ্গে ঘরেও দূষিত বাতাস ঘোরাফেরা করে।

দূষণের জেরে শুধুমাত্র শ্বাসজনিত সমস্যা এবং ফ্লু-এর মতো সংক্রমণ বাড়েই না, এর কারণে দেহের ইমিউনিটিও কমতে শুরু করে। এ ছাড়াও বাতাসে উপস্থিত থাকা নানান ধরনের দূষণকারী উপাদানের কারণে ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে প্রদাহ শুরু হয়। আর ইমিউন সেলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসলে এই ইমিউন কোষগুলিই প্যাথোজেন এবং শ্বাসনালির প্রদাহের সঙ্গে লড়াই করে।মারাত্মক দূষণের মাত্রার কারণে শ্বাসনালির ফিল্ট্রেশন মেকানিজম এবং বায়ু চলাচলের পথ ব্যাহত হয়। যার ফলে লোয়ার রেসপিরেটরি ইনফেকশন শুরু হয়ে যায়।

নিউমোনিয়া এবং এই রোগ সংক্রান্ত জটিলতা কাদের ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি?

নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে জীবন সংশয়ের ঝুঁকি থেকে যায়। নিউমোনিয়ার জেরে হাসপাতালে ভর্তির হার খুবই বেশি এবং সারা বিশ্বে শিশু মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিউমোনিয়াকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। নিম্নলিখিত যে সব বয়সের মানুষদের সাবধান থাকতে হবে তা হল :

১) পাঁচ বছরের কম শিশু

২) যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি

৩) অন্তঃসত্ত্বা মহিলা

৪) যাঁদের মারাত্মক শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা রয়েছে

নিউমোনিয়ার উপসর্গ :

খনও কখনও শুরুর দিকে এই রোগ মৃদু থাকে এবং পরে মারাত্মক ভাবে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
এর উপসর্গগুলি হল :

১) ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর

২) কফের সঙ্গে কাশি

৩) শ্বাসকষ্ট

৪) শ্বাসপ্রশ্বাস অথবা কাশির সময় বুকের ব্যথা

৫) গা-গোলানো, বমি

৬) ক্লান্তি

৭) জোরে জোরে শ্বাস বা হুইজিং (শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়)

দূষণের সময় নিজের শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের কী ভাবে খেয়াল রাখা উচিত?

বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করাটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। শ্বাসকষ্ট স্বাস্থ্যের নানান রকম ক্ষতি করতে পারে। তাই দূষণের প্রভাব রুখতে এবং নিউমোনিয়া-সহ শ্বাসজনিত উপসর্গের জটিলতা এড়াতে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

১) সব সময় মাস্ক (তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক অথবা এন-৯৫ মাস্ক) পরে তবেই বাইরে বেরোতে হবে।

২) ঘরের ধুলো, বায়ু ছিদ্র (Air Vents) সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে ঘরের ভিতরের বাতাসও বিশুদ্ধ থাকে।

৩) ভোরের দিকে বাইরে বেরোনোর অভ্যেস এড়িয়ে চলতে হবে। শুধু তা-ই নয়, মারাত্মক কো-মর্বিডিটি থাকলেও ওই সময় বাইরে বেরোনো উচিত নয়।

৪) যেহেতু নিউমোনিয়ার অন্যতম কারণ হল ফ্লু, তাই ঝুঁকি কমাতে ভ্যাকসিন নিতে হবে।

৫) ধূমপানের মতো অভ্যেস ত্যাগ করতে হবে।

৬) স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে এবং ইমিউনিটি বাড়াতে হবে।

৭) নিয়মিত ভাবে স্টিম ইনহেলেশন, উষ্ণ গরম জলে গার্গল এবং ডিটক্স পানীয় খাওয়া অভ্যেস করে নিতে হবে।

৮) আর সর্বোপরি যদি উপসর্গ দেখা দেয়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।